সমস্ত লেখাগুলি

কেন আমি অজ্ঞেয়বাদী? -
পরাগ সেন
Nov. 19, 2024 | যুক্তিবাদ | views:2393 | likes:25 | share: 0 | comments:0

ধর্ম, ভূতপ্রেত, আত্মা, আত্মার বিভক্ত হওয়া ও তার ট্রান্সফার এগুলো শুনে আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারি না। তবে দুটো জিনিস আমাকে খুব অবাক করে, যার জন্য আমি অজ্ঞেয়বাদী, কিন্তু আস্তিক বা নাস্তিক কোনোটাই নই। একটি হল শক্তি, অপরটি হল জীবন/চেতনা/নিজের শরীরের মাধ্যমে নিজের বহিঃপ্রকাশ, নিজস্ব অনুভূতি বা আত্মপলব্ধি। এবার বলি, গন্ডগোলটা কোথায় কোথায়?


(১) পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির কোনও মৌলিক সংজ্ঞা দেওয়া ভীষণ মুশকিল। ইন ফ্যাক্ট, নেই।

(২) মনে করা হয়, মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ (ধনাত্মক শক্তি বা ভর এবং ঋণাত্মক শক্তি বা মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র কাটাকুটি করে) শুন্য। কিন্তু কিভাবে প্রথম শক্তির উপস্থিতি সম্ভব হল তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ বিগ ব্যাং-এর ঠিক পরমুহূর্তের (১০^-৩৬ সেকেন্ড অবধি) কথা জানা যায় না। গুথের ইনফ্লেশনারি বিগ ব্যাং মডেল (যা বর্তমানে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য) বলে, "Just before the Big Bang, space was filled with an unstable form of energy, whose nature is NOT YET KNOWN. At some instant, this energy was transformed into the fundamental particles from which arose all the matter we observe today. The known laws of nature can in principle explain where the matter and energy in the universe came from, PROVIDED THERE WAS AT LEAST A TINY SEED OF ENERGY TO BEGIN WITH" (সূত্র: Harvard Smithsonian Center for Astrophysics).

এখন প্রশ্ন, এই শক্তি/ম্যাটার, স্থান, সময় কোথা থেকে ও কেন এল? স্ট্রিং থিওরি দিয়ে একে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়েছে। এই মত অনুযায়ী অন্য কোনও মহাবিশ্বের সাথে সংঘর্ষের ফলে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। সেখানেও প্রশ্ন উঠবে আগের মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে?


(৩) এলান গুথের তত্ত্ব অনুযায়ী "A small volume of space occupied by a virtual particle pair (due to quantum fluctuations) could have ballooned to become the vast universe we see today. Alan Guth, one of the main brains behind inflationary cosmology, thus described the universe as-the ultimate free lunch." এখানেও সেই একই প্রশ্ন এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র স্থানের আবির্ভাব কিভাবে? আর কেন স্থান 'নেই' না হয়ে 'আছে'?

তাছাড়া অবজার্ভবল ইউনিভার্সের বাইরের খবর জানা শুধু দুঃসাধ্যই নয়, infeasible. মনে করা হয়, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত ও ত্বরান্বিত হচ্ছে। কিন্তু স্থানের আবির্ভাব ব্যাপারটাই বেশ অদ্ভুত। আবার অন্যদিকে স্থানহীনতা আমাদের কল্পনার বাইরে। একটা লিংক দিলাম। https://www.quora.com/What-caused-the-Big-Bang-6?

(৪) বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, 'ঈশ্বর থাকতে পারেন, কিন্তু বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি রহস্য ব্যাখ্যার জন্য তাঁকে প্রয়োজন নেই'। কারণ হকিং মাল্টিভার্স থিওরিতে বিশ্বাস করতেন এবং তাঁর মতে অন্য মহাবিশ্বের সাথে সংঘর্ষের ফলে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে। কিন্তু মাল্টিভার্স থিওরি সম্পর্কে বিরোধিতা বা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কসমোলোজিস্ট পল ডেভিস বা নোবেলজয়ী ডেভিড গ্রসের মত পদার্থবিদরা। মাল্টিভার্স থিওরিতে প্রশ্ন উঠতে পারে আগের মহাবিশ্ব কিভাবে ও কেন আবির্ভাব হল! 'মাল্টিভার্স এমনিই আবহমান কাল ধরে আছে' এই বক্তব্যের সাথে 'ঈশ্বরকে কেউ তৈরী করেননি, ঈশ্বর (impersonified God) এমনিই আবহমান কাল আছেন'-এই বক্তব্যের মূলগত তফাৎ কোথায়!


(৫) মনে করা হয়, পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব হয় আনুমানিক ৩৫০ কোটি বছর পূর্বে মাইক্রোঅর্গানিসম-এর মাধ্যমে, সম্ভবত ধূমকেতুর থেকে। এর প্রমাণ মেলে সমুদ্রের তলদেশে হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের অবশেষ থেকে। RNA World Hypothesis থিওরিটা অনেকটা এইরকম। কেমিক্যাল স্যুপ (সমুদ্রের জল+ধূমকেতুর রাসায়নিক পদার্থ)---RNA---প্রোক্যারিওট (যেমন, ব্যাকটিরিয়া, আর্কিয়া)---বিভিন্ন ধরণের প্রোক্যারিওটের সহাবস্থানের ফলে (Endosymbiotic Theory) প্রোটিস্ট---দু'ধরণের প্রোটিস্ট প্রোটোজোয়া (সালোকসংশ্লেষে অক্ষম শুধু মাইটোকন্ড্রিয়া বিশিষ্ট) এবং প্রোটোফাইটা (সালোকসংশ্লেষে সক্ষম সবুজ প্লাস্টিড এবং মাইটোকন্ড্রিয়াবিশিষ্ট)---প্রাণী এবং উদ্ভিদ যথাক্রমে। এই হিসাবে দেখতে গেলে প্রাণী থেকেই উদ্ভিদের উদ্ভব হয়েছে। প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়েরই প্রাণ আছে। ল্যাবরেটরিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা কি সম্ভব? প্রাণের সংজ্ঞাই বা কি?

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের জিনোম টেকনোলজি সেন্টারের ডিরেক্টর Dr. Adriana Heguy-র বক্তব্য অনুযায়ী ল্যাবরেটরিতে একদম স্ক্র্যাচ থেকে বা শুধুমাত্র জড়পদার্থ থেকে কোনও জীবিত কোষের সাহায্য ছাড়া প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এমনকি গবেষক Craig Venter-এর সিন্থেটিক ব্যাকটিরিয়া জিনোম সংক্রান্ত যুগান্তকারী গবেষণাটির (২০১০) ক্ষেত্রেও এই একই বক্তব্য প্রযোজ্য। নিচের তিনটি লিংক দেখা যেতে পারে।

1) https://www.quora.com/Have-any-of-the-experiments-to-create-life-been-successful

2) https://www.quora.com/Has-life-been-created-in-the-laboratory

3) https://www.quora.com/Who-was-the-scientist-who-recently-made-life-from-scratch-Can-anyone-provide-the-details-of-this-experiment

সাম্প্রতিককালে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত তমাল দাস ও তাঁর টিমের একটি গবেষণায় (২০১৯) উঠে এসেছে-"energetically feasible interactions between just two small molecules -- hydrogen cyanide and water -- could give rise to most of the important precursors of RNA and proteins." এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত করেছে, কিন্তু সেটি কৃত্তিম প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয়।


(৬) প্রাণকে কি সংজ্ঞায়িত করা যায়? না, যায় না। প্রাণের কোনও মৌলিক সংজ্ঞা নেই। প্রাণের প্রধাণ এবং সাধারণ ধর্ম শারীরবৃত্তীয় কার্যসমূহ পরিচালনা করা বা উল্টোটা। অর্থাৎ শারীরবৃত্তীয় কার্যসমূহ পরিচালিত হয় বলে প্রাণ থাকে। মেশিনের মত। কিন্তু পুরোটা তাও নয়। উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া প্রাণের একটি বৈশিষ্ট্য হতে পারে। কিন্তু সবক্ষেত্রে নয়। কোমায় চলে যাওয়া ব্যক্তি (গ্ল্যাসগো কোমা স্কোর খুব কম হলে) উত্তেজনায় সাড়া নাও দিতে পারে, কিন্তু তবু শারীরবৃত্তীয় কার্য চললে তাকে মৃত বলা যায় না। প্রাণের আরও একটি ধর্ম হল চেতনা অর্থাৎ নিজের মস্তিষ্ক তথা শরীরের মাধ্যমে নিজেকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা, নিজের অস্তিত্বকে বোঝা। কিন্তু সেটাও সর্বৈব নয়। ঘুমন্ত প্রাণীর (যে স্বপ্ন দেখছে না) চেতনা থাকে না, কিন্তু শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী চলায় তাকে মৃত বলা যায় না। আবার, স্পঞ্জের মত প্রাণী উচ্চ চেতনাসম্পন্ন নয়। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে প্রাণকে সংজ্ঞায়িত করা কত ঝামেলার ব্যাপার! প্রাণ নিছক মেশিনের সচলতার মত নয়, আবার ক্ষেত্রবিশেষে তাই-ও।


(৭) এবার অনুভূতি বা চেতনার প্রশ্নে আসি। প্রথমে সৌপর্ণ অধিকারীর এই লেখাটি পড়ে দেখা যেতে পারে। 

https://www.facebook.com/groups/2000118743332714/permalink/3678177875526784

সব অনুভূতির প্রমাণ সম্ভব নয়। অন্ধকে যতই বোঝানো হোক হাতি এইরকম চোখে না দেখলে হাতির ধারণা করা সম্ভব নয়। যে কোনওদিন রসগোল্লা খায়নি তাকে হাজার যুক্তি বিবৃতি দিয়েও বোঝানো সম্ভব নয় যে ওটার স্বাদ ঠিক কিরকম। যার কোনও দিন হাত পা কাটেনি তাকে ব্যাথা বোঝানো সম্ভব নয়, কারণ ব্যাথা মেসারমেন্টের না আছে কোনও যন্ত্র, না আছে কোনও ইউনিট (ডেল ইউনিট বাতিল হয়ে গেছে)। মানুষের ও অন্যান্য প্রাণীর জাগ্রত অবস্থা (চেতনা) নিয়ন্ত্রণ বা প্রমোট করে ওরেক্সিন বা হাইপোক্রেটিন নামক নিউরোপেপটাইড [short chains of amino acids linked by peptide (amide) bonds]। মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০০০-২০০০০ ওরেক্সিন উৎপাদনকারী নিউরোন বা স্নায়ুকোষ থাকে। ভিন্ন ভিন্ন খাঁচায় (শারীরিক কাঠামোয়) গ্র্যাজুয়ালি ভিন্ন ভিন্ন চেতনার জন্ম হয়। গ্র্যাজুয়াল কেন? কারণ ঠিক কবে থেকে আমরা আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব বুঝতে পারি তা আমাদের নিজেদেরই অজানা। মোটামুটিভাবে যেটুকু বলা যায় তা নিচের লিঙ্কে পড়ে দেখা যেতে পারে।

https://www.scientificamerican.com/article/when-does-consciousness-arise/

এখন সমস্যা হচ্ছে কেন ওরিক্সিন চেতনার জন্ম দেয় বা একজনকে তার 'আমিত্ব' বুঝতে সাহায্য করে তা খুব একটা পরিষ্কার নয়। আমি আমার খাঁচায় শুধু 'আমিত্ব' অনুভব করি। যখন ঘুমাই (স্বপ্ন না দেখা অবস্থায়) বা অচেতন থাকি, তখন আমার খাঁচায় আমি কোনও 'আমিত্ব' উপলব্ধি করতে পারি না। যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হই, তখন আবার আমি আমার খাঁচায় 'আমিত্ব' উপলব্ধি করি, কিন্তু অন্যের খাঁচায় করি না। প্রতিটা খাঁচার 'আমিত্ব' চেতনা হলেও তারা স্বকীয় এবং ভিন্ন/আলাদা-আলাদা। সুতরাং জাগ্রত অবস্থার 'আমিত্ব' নিছক ওরিক্সিন কেন্দ্রিক চেতনার চাইতেও বেশি কিছু যা একই খাঁচায় বারংবার জাগ্রত হতে পারে, কিন্তু অন্য খাঁচায় ট্রান্সফার হতে পারে না।

সমস্যার জায়গা মূলতঃ দু'টো। প্রথমত, জড় পদার্থ থেকে প্রাণের আভির্ভাব, ব্যাপারটা অদ্ভুত। এই একই কাজ ল্যাবরেটরিতে একদম স্ক্র্যাচ থেকে করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, শারীরিক গঠন এবং শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী চেতনা তথা আমিত্বের জন্ম দিলেও আমিত্ব ব্যাপারটাই স্বকীয়। আমার 'আমিত্ব' অন্য খাঁচাতেও উপলব্ধি করতে পারতাম। কিন্তু কেন তা আমার খাঁচায়ই, অন্য খাঁচায় নয়, তা অজানা। অর্থাৎ, সহজ কথায় কেন আমি অন্য কেউ নই, তা অজ্ঞাত। শারীরিক গঠন ও শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলীর বিভিন্নতা ভিন্ন ভিন্ন চেতনা তথা আমিত্বের জন্ম দেয় কিনা উইল রিমেইন আননোন ফরএভার।


উপসংহার:

(১) অনেক মানুষের বক্তব্য বিজ্ঞান তো অনেক সমস্যারই সমাধান করতে পারে না। তাহলে কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হবে! না, এরকম কেউ মাথার দিব্যি দেয় নি যে 'ঈশ্বর' নামক বড়বাবুর অস্তিত্ব তাই বলে স্বীকার করতে হবে। কেউ যদি তাকে 'প্রকৃতি' বলে খুশি হন, হোন না, কে বারণ করেছে! কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু বক্তব্য আছে। বিজ্ঞান অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে না তো ঠিকই, ইন ফ্যাক্ট বেশির ভাগ সমস্যারই সমাধান করতে পারে না। এদের মধ্যে হয়তো কিছু সমস্যার সমাধান ভবিষ্যতে হবে, কোনও সমস্যার সমাধান হয়তো কোনও দিনই হবে না। কিন্ত এই সমস্যাগুলোর মধ্যেও চরিত্রগত দিক আছে। অধিকাংশ সমস্যারই মূল কারণ পরিমাপজনিত সমস্যা বা যথাযথ মডেল ডেভেলপমেন্টের অসুবিধা। বস্তুত এগুলো কোনও ফান্ডামেন্টাল প্রবলেম আদৌ নয়। কিন্তু আমরা আমাদের যত জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করব তত দেখব যে আমরা আসলে ফান্ডামেন্টালি প্রায় কিছুই জানি না, কিচ্ছুটি না। 

শক্তির সংজ্ঞা আমাদের অজানা, মহাকর্ষের প্রকৃতি আমাদের অজানা, সবচেয়ে বড় কথা কেন স্থান আদৌ আছে (নাও তো থাকতে পারত, স্পেসটাইমের অস্তিত্বই না থাকতে পারত) বা কেন সময় একইদিকে ধাবিত হয় (অন্যভাবে বিশ্বব্রহ্মান্ড শুরুর ক্ষেত্রে এনট্রপি কেন ভীষণ কম ছিল) এই বেসিক প্রশ্নগুলোর উত্তরই আমাদের অজানা। একটা সফটওয়ার কিভাবে বানানো হয়েছে সেটা না জেনে সফটওয়্যারটা ব্যবহার করা যেরকম ব্যাপার এটা খানিকটা তেমনই। এর মানে বিজ্ঞানীদের আমি সমালোচনা করছিনা, তাঁদের প্রচেষ্টাকে সর্বদাই কুর্নিশ। কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে নাস্তিক বিজ্ঞানী যেমন আছেন, অজ্ঞেয়বাদী বিজ্ঞানীর সংখ্যাও প্রচুর। স্বয়ং আইনস্টাইন অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন। 

মূল কথা এটাই যে এই ফান্ডামেন্টাল ইগনোরেন্স (যা কোনোদিনই জানা সম্ভব নয়, almost infeasible) আর পাঁচটা বিজ্ঞানের না জানার মত নয়। তাই এমন কিছু চিরকাল থাকবে যা সবসময়ই মানুষের মনে শুধু বিস্ময়েরই সৃষ্টি করবে না, অকল্পনীয়ই থাকবে।  


(২) এখানে একটা কথা বলা দরকার। পাশ্চাত্যের অধিকাংশ বিজ্ঞানীই কিন্তু ধর্ম এবং ঈশ্বরচেতনাকে এক ও অভিন্ন দেখেন। তাই তাঁদের কাছে অজ্ঞেয়বাদ নাস্তিকতার অনেক নিকট। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা আস্তিকতা এবং ধর্মের গালগল্পকে অস্বীকার করবেন। যেহেতু আস্তিকতা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত তাই সেটাকেও অস্বীকার করবেন। কিন্তু আমাদের দেশের বিশিষ্ট পদার্থবিদ ও বিজ্ঞানী ডঃ মণি ভৌমিকের মত মানুষেরা ঈশ্বরচেতনা ও ধর্মকে আলাদা করতে পারেন। কিছু পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীও পারেন। সামাজিকভাবে বা কমিউনিটিগত ভাবে অবশ্যই এর কোনও মানে হয় না, কারণ সামাজিক ক্ষেত্রে ঈশ্বর ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু ইন্ডিভিডুয়ালি তার মানে আছে বৈকি। এরকম মানুষ খুব কম সংখ্যায় হলেও সমাজে আছেন যাঁরা মনে করেন ঈশ্বরচেতনা ও ধর্ম সম্পূর্ণ পৃথক, ঈশ্বরচেতনাকে কাজে লাগিয়ে ধর্ম নামক ভণ্ডামির উৎপত্তি হয়েছে। এই দলে নোবেলজয়ী পদার্থবিদ আরনো এলান পেনসিয়াস থেকে শুরু করে হার্ভার্ড মেডিসিন স্কুল ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির নোবেলজয়ী রসায়নবিদ ক্রিস্টিয়ান এনফিনসেনের মত বহু বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আছেন। এনফিনসেনের একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল: 

“I think that only an idiot can be an atheist! We must admit that there exists an incomprehensible power or force with limitless foresight and knowledge that started the whole universe going in the first place.”


আমার ব্যক্তিগত মতামত আস্তিকতা ও নাস্তিকতা উভয়ই গোলমেলে। অজ্ঞেয়বাদ সুবিধাবাদী বা ডিপ্লোম্যাটিক হলেও অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য তার স্ট্রং স্টেটমেন্টের জন্য। অজ্ঞেয়বাদের বক্তব্য খুব সিম্পল-"We don't know and probably will never know how and WHY existence had come into existence in the first place. We don't know why 'I am ME'. Hence, mystery will remain forever." এবার এই রহস্যময়তাকে (যা আর পাঁচটা সাধারণ বিজ্ঞানের অজানার মত নয়) কেন্দ্র করে ঈশ্বর, প্রকৃতি, ভূতপ্রেত, ব্রহ্মদৈত্য যে যা খুশি বিতর্ক চালিয়ে যেতে পারেন।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929